অভিনয়ের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র আসাদুজ্জামান নূর

নাটক

এদেশে অল্প কয়েকজন সফল শিল্পীর তালিকায় তার নাম উঠে আসে অনায়াসে। নিখুঁত শিল্পী তিনি। বর্ণাঢ্য তার অভিনয় ক্যারিয়ার। বেতার, টেলিভিশন, মঞ্চ, চলচ্চিত্র, রাজনীতি সবখানেই সাফল্য ছুঁয়ে গেছে তাকে। তিনি আসাদুজ্জামান নূর। অভিনয়ের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।

গুণী এ শিল্পীর আজ জন্মদিন।

টেলিভিশন নাটকে এমন কিছু চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন যার জন্য আজও দর্শকদের কাছে প্রিয় একজন অভিনেতা হিসেবে স্থান দখল করে আছেন। শুধু বাকের ভাই চরিত্রটি দিয়েই তিনি মানুষের মনে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ। নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকের আলোচিত চরিত্র বাকের ভাই হিসেবে অভিনয় করে আজও অনেকের কাছে তিনি জনপ্রিয় হয়ে আছেন বাকের ভাই হিসেবেই।

বাকের ভাই চরিত্রটি করার বদৌলতে বেশিরভাগ মানুষ তাকে বাকের ভাই নামে ডাকেন।

‘অয়োময়’ নাটকের জমিদার মির্জা হিসেবে নিজের সবটুকু দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। বিটিভিতে নাটকটি যখন প্রচারিত হয়, তখনকার মানুষ তাকে জমিদার বলেই ডাকতেন। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘অয়োময় নাটকের মির্জা চরিত্রটি আমার অভিনয় জীবনের বড় একটি মাইলফলক। খুব প্রিয় একটি কাজ এটি। অভিনয় করার এবং নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কাজ করার মত একটি চরিত্র ছিল। আজও মনে পড়ে নাটকটির কথা।’

‘বহুব্রিহী’ নাটকের ভবঘুরে আনিস চরিত্রটি করেও সে সময়ে তুমুল প্রশংসিত হয়েছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। গল্পের জাদুকরী বিষয়টিও ছিল বহুব্রিহী নাটকে। অভিনয় শিল্পী ও পরিচালকের মুনশিয়ানাও ছিল। কোথাও কেউ নেই এবং বহুব্রিহী নাটক দুটি নিয়ে এরকম কথা প্রচলিত আছে- নাটক দুটি প্রচারের সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যেত।

আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘এই নাটকগুলো যখন প্রচার হত- রাস্তাঘাট খালি হয়ে যেত। আমাদের সময়ে একটি পর্বের সময়সীমা ছিল ৫০ মিনিট। এখন সেটা কমে গেছে। দুটি নাটকই প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এখানেই হুমায়ূন আহমেদ অন্যদের থেকে আলাদা। এরশাদের সামরিক সরকার থাকাকালীন, বহুব্রিহী নাটকে তুই রাজাকার কথাটি বলা কিন্তু কম সাহসের ব্যাপার না। তাও আবার রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদের লেখার জাদু এখানেই। তিনি কেবল বিনোদন দেননি, ম্যাসেজ দিয়েছেন, মানুষকে সচেতন করেছেন। হুমায়ূন আহমেদের নাটকে হাসির বিষয় ছিল, কিন্তু ভাঁড়ামি ছিল না।’

নান্দাইলের ইউনুস আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত আরেকটি আলোচিত চরিত্র এবং ব্যাপক সাড়া জাগানো কাজ। নব্বই দশকের শুরুতে (১৯৯১ সালে) বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের লেখা মাটির পিঞ্জিরা নাটকটি। নওয়াজেশ আলী খান নাটকটির পরিচালক ছিলেন। এ নাটকে ভাড়াটে খুনি ইউনুস চরিত্রটির জন্য আজও অনেকের মনে গেঁথে আছেন তিনি। এখনও অনেকে তাকে নান্দাইলের ইউনুস বলে সম্বোধন করেন।

আসাদুজ্জামান নূর অভিনীত আরেকটি আলোচিত চরিত্রের নাম মনা ডাকাত। নাটকের নাম নিমফুল। এই নাটকটির নাট্যকারও হুমায়ূন আহমেদ। মনা ডাকাত একজন ভয়ংকর ডাকাত। ময়মনসিংহ অঞ্চলে তার বাড়ি। হঠাৎ শিশু পুত্রসহ ধরা পড়ে সে। এখন তার চোখ তোলা হবে খেজুর কাঁটা দিয়ে। এমনই একটি গল্পের নাটক নিমফুল।

নব্বই দশকের বিটিভির আরেকটি আলোচিত ও প্রশংসিত টিভি নাটকের নাম জননী। এই নাটকে অভিনয় করেও বিপুলভাবে নন্দিত হন আসাদুজ্জামান নূর।

বিটিভির আলোচিত একটি ধারাবাহিক নাটকের নাম এইসব দিনরাত্রি। এই নাটকের রফিক চরিত্রটি করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। তার চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে সেই সময়ের একজন বেকার যুবকের হতাশা ও কষ্টের চিত্র তুলে ধরা হয়েছিল।

এই শিল্পীর ক্যারিয়ার এতটাই দীর্ঘ যা ছোট্ট পরিসরে লিখে শেষ করা যাবে না। টিভি নাটক ছাড়াও মঞ্চ নাটক ও সিনেমায় তার রয়েছে অনেক অবদান।

শুধুমাত্র একটি মাত্র সিনেমা নিয়ে বলা হলেও তার গুণের পরিচয় তুলে ধরা সম্ভব। সিনেমাটির নাম আগুণের পরশমণি। হুমায়ুন আহমেদ পরিচালিত আগুণের পরশমণিতে আসাদুজ্জামান নূর মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলমের ভূমিকায় অভিনয় করে সবার মনে ঠাঁই করে নেন।

অভিনয় জীবনের শুরুটা করেছিলেন মঞ্চ দিয়ে। সদ্য দেশ স্বাধীন তখন। নাগরিক নাট্য সম্প্রদায় মঞ্চে নিয়ে আসে ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকটি। এই নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই আজকের বিখ্যাত এই অভিনেতার অভিনয় জীবন শুরু।

ঢাকার মঞ্চের জনপ্রিয় নাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’র পরিচালক আসাদুজ্জামান নূর।

নন্দিত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর আজ ৭৪ বছরে পা দিলেন।

জন্মদিন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘যে জীবন আমি পার করে এসেছি তা কাজের মধ্য দিয়ে। জীবন মানে কর্ম। এখনো কাজ করছি। কাজ করতে করতে একটা জীবন পার করে দিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *