আজিজুল হাকিম টিভি নাটকে অভিনয় করছেন প্রায় চল্লিশ বছর ধরে। তার আগে তিনি আরণ্যক নাট্যদলে কাজ করেছেন। ‘পদ্মানদীর মাঝি’র মতো আলোচিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। একসময় বাংলাদেশ বেতারেও নিয়মিত অভিনয় শিল্পী ছিলেন। দর্শকপ্রিয় নাট্যশিল্পী আজিজুল হাকিম কথা বলেছেন ডেইলি স্টারের সঙ্গে। শোনা যাক তার নিজের মুখের কিছু কথা।
‘শঙ্খনীল কারাগার’ সিনেমার একটি গল্প বলি। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি নির্মাণ করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। মন্টু চরিত্রে আমি অভিনয় করেছিলাম। সেসময় হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়। আমি মন্টু চরিত্রটি করছি জেনে তিনি খুশি হন। তারপর সিনেমাটি প্রশংসিত হলো। আমার অভিনয়ও প্রশংসিত হলো।
হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় নাটক ‘নক্ষত্রের রাত’-এ আমি সরাসরি তার পরিচালনায় অভিনয় করি। আমি, শমী কায়সার, আসাদুজ্জামান নূর, আফসানা মিমিসহ আরও অনেকে অভিনয় করেন। ডিএফপিতে শুটিং করতাম আমরা। কতো স্মৃতি মনে পড়ে। শুটিংয়ের সময় সারাদিন হুমায়ূন আহমেদ উপস্থিত থাকতেন।
সেটে বসেই তিনি নাটক লিখতেন। তিনি আড্ডা দিতে পছন্দ করতেন। একদিন একটি দৃশ্য শেষে সারাদিন আড্ডা দেওয়ার স্মৃতি মনে পড়ছে। একদিন শুটিং স্পটে কুদ্দুছ বয়াতিকে দিয়ে গান করালেন। ওই স্মৃতিটাও মনে পড়ে খুব।
আরণ্যক নাট্যদলে কাজ করতে গিয়ে সব দলের নাটকের সদস্যদের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। ঘনিষ্ঠ বন্ধুও হয়ে যায় অনেকে। ঢাকা থিয়েটার এবং অন্যান্য থিয়েটারের বন্ধুদের নিয়ে আমরা দিনের পর দিন সময় কাটিয়েছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমরা মহিলা সমিতির সামনে আড্ডা দিয়েছি। তা চলেছে বছরের পর বছর। সেই আড্ডার স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে। একজীবনে অভিনয় করতে এসে থিয়েটারের পেছনে বছরের পর বছর সময় পার করেছি। এগুলো আমার অভিনয় জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।
১৯৮১ সালে আমি বিটিভিতে তালিকাভুক্ত হই অভিনয় শিল্পী হিসেবে। ‘নোঙর’ নাটকে ছোট একটি চরিত্র দিয়ে টিভি নাটকে অভিনয় শুরু করি। তারপর বড় সুযোগ এলো। বিটিভির জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘কোন কাননের ফুল’-এ অভিনয় করি অলি চরিত্রে। আমার বিপরীতে ছিলেন শমী কায়সার।
ফখরুল আবেদীন দুলাল ছিলেন প্রযোজক। নাট্যকার ছিলেন ইমদাদুল হক মিলন। ‘কোন কাননের ফুল’ আমার অভিনয় জীবনের গল্প বদলে দেয়। অভিনয় জীবনে এই নাটকটি আমার সুখের স্মৃতি হয়ে আছে।
মনে পড়ে ‘সংশপ্তক’ নাটকটির কথা। মনে পড়ে ‘সময় অসময়’ নাটকের কথা। মনে পড়ে ‘দিনরাত্রির খেলা’ নাটকটির কথা। এরকম অসংখ্য নাটকের কথা মনে পড়ে, যা বলে শেষ করা যাবে না। এসব নাটকই আমাকে শিল্পী হিসেবে সবার কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
আমার অভিনয় জীবনে থিয়েটারের অবদানই বেশি। নাট্যদল আরণ্যক এবং আমার নাট্যগুরু মামুনুর রশীদের অনেক অবদান রয়েছে। কতো আনন্দ-বেদনার স্মৃতি আছে। ‘ওরা কদম আলী’, ‘ইবলিশ’, ‘গিনিপিগ’, ‘আগুনমুখা’, ‘খেলা খেলা’, ‘মানুষ’ ইত্যাদি মঞ্চ নাটকগুলোতে আমি বছরের পর বছর অভিনয় করেছি। মঞ্চে অভিনয় করে সরাসরি দর্শকদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়েছি।
মঞ্চ নাটক নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশে গেছি। কলকাতায় আমরা মঞ্চ নাটক করে সাড়া ফেলেছিলাম। এসবই আমার পেছনের জীবনের ভালো লাগার স্মৃতি।
এক সময়ে রেডিওর নাটক ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলো। কতো নাটক করেছি রেডিওতে! কেবলমাত্র রেডিওতে নাটক করেও এতো ভালোবাসা পাবো তা ভাবিনি। সেসময় রেডিওতে একটি নাটক প্রচারিত হলে মানুষের কাছে থেকে সাড়া পেতাম, ভালোবাসা পেতাম।
মানুষের ভালোবাসা নিয়ে আজও অভিনয় করে যাচ্ছি। জীবন অভিজ্ঞতাময় হচ্ছে। আরও সমৃদ্ধ হোক অভিনয় জীবন- এটাই চাওয়া আমার।
Source: https://www.thedailystar.net/